জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে কোটি টাকার মিশন কাজ করেছে। পুরো ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদপুরের এক সাবেক কাউন্সিলর। মিশন সাকসেস করতে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল অন্তত ২০ জনের একটি গ্রুপ। হত্যাচেষ্টা থেকে শুরু করে শুটারদের সীমান্ত পাড়ি দিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছে তারা। কেউ অর্থ জোগান দিয়েছে, কেউ দিয়েছে অস্ত্র। ঘটনার পর দ্রুত পালাতে কয়েক ধাপে যানবাহন প্রস্তুত রাখা, সীমান্ত পার হতে সহায়তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করা হয়। সবই ছিল পরিকল্পনার অংশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ধারণা করছে, এ ধরনের একাধিক শুটার গ্রুপ মাঠে সক্রিয় থাকতে পারে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থার চৌকশ সদস্যরা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে একযোগে মাঠে কাজ করছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ওসমান হাদিকে হত্যার লক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকা ইনভেস্ট করার প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। শুটার ফয়সালের বাসা থেকে বেশকিছু চেকও উদ্ধার করা হয়েছে।
হাদি হত্যাচেষ্টায় এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাদি হত্যাচেষ্টায় কার কী ভূমিকা ছিল, এর পেছনে কারা কাজ করেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
সূত্র বলছে, রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। ওসমান হাদির ওপর হামলার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন কথিত বান্ধবী মারিয়া। ঘটনার আগের রাতে ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের ২০৪ নম্বর রুমে রাত্রিযাপন করেন। সেখানে ছিলেন ফয়সালের কথিত বান্ধবী মারিয়া। ওই রাতে ফয়সাল তার বান্ধবীকে বলেন, ‘কাল এমন কিছু হবে, সারা দেশ কাঁপবে’। শুক্রবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে তারা রিসোর্ট ছেড়ে একসঙ্গে ঢাকায় আসেন।
গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বলছে, ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর চলে যান রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে বোন জেসমিনের বাসায়। সেখানে উপস্থিত ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট বদল করে দেন এবং পালানোর জন্য গাড়ি ডেকে দেন। এছাড়া স্ত্রী সামিয়া তার ভাই শিপুকে দিয়ে বিকাশে ফয়সালের কাছে মোট ৪০ হাজার টাকা পাঠান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পর্যন্ত যেতে যে প্রাইভেট কার ভাড়া করা হয়, এর চালক এখন পুলিশ হেফাজতে। তার দেওয়া তথ্যমতে আরেক প্রাইভেট কারচালকও নজরদারিতে রয়েছেন। যিনি ময়মনসিংহে যাওয়া প্রাইভেট কারটি ভাড়া করে দেন। পুলিশ বলছে, তাকে গ্রেফতার করতে পারলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।