রিয়াদের এক ফিটনেস স্টুডিওতে আরবি সুরের তালে বেলি ড্যান্স শিখছেন ডজনখানেক নারী। এমন নাচ শেখা এখনো সৌদি সমাজে অনেকটা গোপন আনন্দের বিষয়। সম্প্রতি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। অংশগ্রহণকারীদের কেউই আসল নাম প্রকাশ বা মুখ দেখাতে রাজি নন। কারণ, প্রাচীন এই নৃত্যরীতি ঘিরে এখনো রয়েছে বাধা।
আরব সমাজে বেলি ড্যান্স বহু যুগ ধরে শিল্প, বিনোদন ও চলচ্চিত্রের অংশ। সম্প্রতি এটি বিশ্বজুড়ে নারীদের কাছে শরীরচর্চা ও আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে এমনকি নারীদের জন্য আবদ্ধ কক্ষও এখনো সমাজের চোখে নিষিদ্ধ বলে ধরা হয়। এক অংশগ্রহণকারী বলেন, আমরা রক্ষণশীল সমাজে বাস করি। বেলি ড্যান্সকে যৌন আবেদনময় হিসেবে দেখা হয়। কোনো পরিবার বা স্বামীই চান না, অন্য পুরুষেরা তাদের নারীকে এভাবে দেখুক।
সৌদি সমাজে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়েছে। নারীরা এখন গাড়ি চালাতে পারেন, মাথার আবরণ ছাড়াও বাইরে যেতে পারেন। কিন্তু সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতা এখনো গভীরভাবে প্রোথিত। অংশগ্রহণকারীদের প্রধান উদ্বেগ হলো, তাদের নাচের ছবি বা ভিডিও বাইরে চলে যাওয়া। এজন্য ফোন ব্যবহারে কঠোর নজরদারি রাখা হয়। এক নারী বলেন, কেউ আমাকে রেকর্ড করে ক্ষতি করতে পারেন, এই ভয় সব সময় থাকে।
রিয়াদের এই ক্লাসে দুজন প্রশিক্ষক কাজ করেন। তারা নিজেদের ‘ড্যান্সার’ নয়, বরং ‘কোচ’ বলে পরিচয় দেন। তাদের একজন বলেন, আমরা নাচকে খেলাধুলায় রূপ দিয়েছি। সৌদিরা আনন্দ করতে ভালোবাসেন, জীবন উপভোগ করতে চান। তবে সবসময় ধর্ম ও শালীনতার সীমার মধ্যে থেকে।
রিয়াদজুড়ে এখন নারীকেন্দ্রিক যোগব্যায়াম, বক্সিং ও বেলি ড্যান্স স্টুডিও গড়ে উঠছে। যা একসময় কল্পনাতীত ছিল। তবে পুরুষ ও নারীর আলাদা আলাদা ক্লাসের নিয়ম এখনো কঠোরভাবে মানা হয়। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীততত্ত্ব অধ্যাপক লিসা উরকেভিচ বলেন, বেলি ড্যান্স আরব উপদ্বীপের বাইরের উৎপত্তি হওয়ায় এটি স্থানীয় নাচের চেয়ে অনেক বেশি উদ্দীপক। তাই অনেক পরিবার মেয়েদের এই নাচে অংশ নিতে দেয় না।