নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবার যে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিলো তাতে কেঁপে উঠেছিলো রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। এতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত দশ জন এবং আহত হয়েছেন পাঁচশোর বেশি মানুষ। ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের শক্তি জমছে বলে জানিয়েছে দেশি বিদেশি সংস্থা ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মাধবদীর যেই ভূমিকম্প সারাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় যে তীব্র আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে তার কারণ কি? কিংবা ঢাকা শহরে ব্যাপক ঝাঁকুনি দেয়া এই ভূমিকম্প সম্পর্কে আর কী জানা যাচ্ছে? ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, মাধবদীর ভূমিকম্পের কারণ ভূগর্ভে ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেটের অবস্থান পরিবর্তন।
ইউএসজিএস এর মতে, শুক্রবার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে যে অঞ্চলে সেখানে ১৯৫০ সালের পর থেকে শুক্রবারের ভূমিকম্পের আগে ৫ দশমিক ৫ মাত্রা বা এর চেয়ে বড় আকারের ভূমিকম্প হয়েছে ১৪টি।
টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে- পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তরদিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। "তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোন তৈরি হয়েছে। আর নটরিয়াস এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে,"
তার মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে যে ভূমিকম্পের উৎস ছিলো সেটা এই সেগমেন্টেরই এবং নরসিংদীতে দুই প্লেটের যেখানে সংযোগস্থল, সেখানেই ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই প্লেটের সংযোগস্থলে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে আটশ বছরের বেশি সময় ধরে। সেখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূকম্পন তৈরির মতো শক্তি জমা হয়ে আছে। আর এটা বের হবেই। আর সেটি হলে ঢাকা নগরী একটি মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠার আশংকা আছে।