আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড তৎপর হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধ বাড়ছে। টার্গেট করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। একইভাবে দেশের দুই সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার, দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট এবং উদীচী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ছাড়াও জনমনে নানারকম শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে হত্যার উদ্দেশ্যে হাদিকে গুলি করার পর খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় নেতা মোতালেব শিকদারকে গতকাল সোমবার মাথায় গুলি করা হয়েছে। মোতালেব শিকদারের গুলির বিষয়ে পুলিশ ভিন্ন কারণের কথা বললেও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক কাটছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত হয়েছে, অনেক অপরাধী টার্গেট কিলিংয়ে নেমেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিরা এসব অপকর্মে ভাড়ায় খাটছে। দেশ ও দেশের বাহির থেকে আসছে নির্দেশনা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। গুলির ১২ দিন পরও হাদির মূল খুনিরা ধরা না পড়ায় সরকারে ও সরকারের বাইরে উদ্বেগ কাটছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি নেতা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হুমকিতে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট বানচালের পরিবেশ তৈরি করাই টার্গেট কিলিংয়ের মূল উদ্দেশ্য। সরকার মনে করছে, এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতা। তাদের উদ্দেশ্য দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য ও সমাজে ভীতি-আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি নির্বাচন বানচাল করা।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হলেও কেউ সতর্ক হচ্ছে না। ইতিমধ্যে অপরাধীরা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে খুন করতে শুরু করেছে। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার পাশাপাশি নেপথ্যে আওয়ামী লীগের ইন্ধন ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বে বাড়ছে খুনসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের নিরাপত্তা বাড়াতে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।