ইসলামপুর উপজেলার যমুনার চরে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। গত ১৬ জানুয়ারী সোমবার বেলগাছা ইউনিয়নের চর মুন্নিয়া গ্রামের সিন্দুর তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানায়,কোন শিক্ষকই বিদ্যালয়ে আসে না তবে, প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা বেগম মাঝে মধ্যে জামালপুর থেকে আসেন; রাত্রি যাপন করে আবার ২/১দিন পরে চলে যান জামালপুরে। আর কোন শিক্ষকই আসেনা বলে স্থানাীয়রা জানান। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার নেই কোন পরিবেশ,প্রধান শিক্ষিকা নিজেই স্কুল ঘরের উপর লাউ গাছ চাষ করেছেন। জানা যায়, সরকারি এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে চরবাসীর সন্তানদের শিক্ষার আলো জালাতে সরকার ৪জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়,সহকারী শিক্ষিকা তানজিনা আক্তার মাসের পর মাস ঢাকা থাকেন। বাবলী ও মেহেদী হাসান নামে শিক্ষক দীর্ঘদিন স্কুল ফাকিঁ দিয়ে ভূয়া হাজিরা স্বাক্ষর দিয়ে সরকারের টাকা উত্তোলন করছেন। এসব অনুপস্থিত শিক্ষকদের বদলে মাসে ৩হাজার টাকার বিনিময়ে বিলকিস নামে একজন পক্স্রি শিক্ষিকা থাকলেও সম্প্রতি ওই পক্সি শিক্ষিকার টাকা নিয়মিত পরিশোধ না করায় তিনিও বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই স্কুল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবকরা জানান। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা বেগমের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান,অফিসিয়াল কাজে ব্যাস্ত রয়েছেন,অন্যান্য শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি কোন সদত্তোর দিতে পারেননি; তবে মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষক ট্রেনিং এ রয়েছেন বলে জানান।
এছাড়াও যমুনা নদীর দুর্গম চর বরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকায় প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানো হচ্ছে ফলে ওই বিদ্যালয়ে ১৮২ জন ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ও স্কুলে সরেজমিনে গিয়ে প্রাক প্রাথমিকসহ সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত পাঁচজন শিক্ষকের এক জনকেও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় চরের বাসিন্দা আবু কালাম আজাদ ও তার স্ত্রী নাছিমা নামের দুইজন প্রক্সি শিক্ষক বিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান,প্রধান শিক্ষক রমজান আলী ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা স্কুল ফাঁকি দিয়ে মাসের পর মাস জামালপুরে অবস্থান করায় অন্যান্য সহকারী শিক্ষকেরাও মাসে একদিনও স্কুলে আসেন না। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াসহ বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার কোনো পরিবেশই নেই বিদ্যালয়টিতে। চারদিকে মৌমাছি মৌচাক করেছে। শিক্ষক না আসার কারণে শিশুরা ঝরে পড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কেউ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান না।
জানা গেছে,মাসে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আবু কালাম আজাদ নামে একজন প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে নামমাত্র বিদ্যালয় খোলা রেখে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ মাসে মাসে ঠিকই বেতন তুলছেন। বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষক হাজিরার কোনো খাতা পাওয়া যায়নি। প্রক্সি শিক্ষক আবু কালাম আজাদ জানান, শিক্ষক হাজিরা খাতা প্রধান শিক্ষকের কাছে থাকে। আমি কিছুই জানি না।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. শাহজাহান জানান,বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা না আসার কারণে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রায় ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নেই। বিদ্যালয়টির উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ আসলেও প্রধান শিক্ষক কাজ না করেই ভূয়া বিল-ভাউচারে আত্মসাত করেন।
একই অবস্থা শিলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পশ্চিমাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলির। এসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসে না শিক্ষরা,উড়েনা জাতীয় পতাকা,বাজে না ঘন্টা, অফিসে নেই কোন জাতীর পিতা ও প্রধান মন্ত্রীর ছবি। শিক্ষার নেই কোন পরিবেশ। অথচ্য বিদ্যালয়ে নামে সরকারি বরাদ্ধ স্লিপ,প্র্যাকসহ কন্টিজেন্সিবিল ভূয়া ভাওচারে শিক্ষকরা আত্বসাত করে চলেছেন। জানা যায়,যমুনার চরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকারা যোগদান করেই মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জানান, এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।