নির্বাসন বা কারাবাস অনেক সময়ই কোনো নেতার রাজনীতির শেষ নয়। যুগে যুগে ইতিহাস এটিই প্রমাণ করেছে। জনগণের সমর্থন, আদর্শ ও সংগ্রামের শক্তিতে বহু বিশ্বনেতা দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেছেন।
সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে রাজনৈতিক নিপীড়নের কারণে আশির দশকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বেনজির ভুট্টো। যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত অবস্থায়ও তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দেন। জিয়াউলের পতনের পর দেশে ফিরে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৩ সালে তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনের বিরোধিতার কারণে ১৯৬৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তুরস্ক, ইরাক ও ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটালেও সেখান থেকেই তিনি বিপ্লবী আন্দোলন চালিয়ে যান। ১৯৭৯ সালে শাহের পতনের পর দেশে ফিরে ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন এবং ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
জার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে লেনিন বারবার গ্রেপ্তার ও নির্বাসনের শিকার হন। সাইবেরিয়া ও ইউরোপে নির্বাসিত অবস্থায় তিনি বলশেভিক মতাদর্শ গড়ে তোলেন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় ফিরে অক্টোবরে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হন।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কারণে ১৯৬৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান নেলসন ম্যান্ডেলা। টানা ২৭ বছর কারাগারে থাকার পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পান। পরে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটান এবং ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে সংবর্ধনা দিতে রাজধানী ঢাকায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে। এই ঐতিহাসিক মুহুর্তে তিনিও ইতিহাস গড়া বিশ্বনেতাদের দলের একজন হয়ে উঠলেন কি না তা নিয়ে চলছে আলোচনা।