১৯৮৪ সালে ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪০৪টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ১৯৮৯-তে ১৯৭ আসনে জিতে বিধ্বস্ত হয়। মাত্র সাড়ে নয় শতাংশ ভোট হারানোর কারণে ২০৭টি আসন খোয়ায় দলটি। কংগ্রেস ২০০৯ সালে ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ২০৬টি আসন জিতেছিল। এটি ২০১৪ সালে নেমে আসে ৪৪-এ। ভোট পায় সাড়ে ১৯ শতাংশ। এর অর্থ শতকরা ৯ ভাগ কম ভোট পাওয়ার ফলে ১৬২টি আসনে ক্ষতির শিকার হয় কংগ্রেস। কিন্তু এই ঢোল জোরের সাথে বাজানো হচ্ছে যে, ৩৭ ভাগ ভোট এবং ৩০৩টি আসন পাওয়া বিজেপি একটি দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো।
পরিসংখ্যানগত বিস্ময় রাজনৈতিক যুক্তিকে অস্বীকার করে। ১৯৮৪ সালে বিজেপি ৭ ভাগ ভোট পেয়ে মাত্র দুটি আসন জিতেছিল। ১৯৮৯ সালে তারাই শতকরা ১১ ভাগ ভোট পেয়ে এক লাফে ৮৩টি আসন পেয়ে গেল। ৮১টি আসন বাড়লেও বিজেপির ভোট বেড়েছিল মাত্র ৩ ভাগ। ২০১৪ সালেও ৩১ ভাগ ভোট পেয়ে ২৮২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। অথচ ২০০৯ সালে তারা শতকরা ১৮ ভাগ ভোট পেয়ে মাত্র ১১৬টি আসন পেয়েছিল। অর্থাৎ হিসাব করলে দেখা যায়, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে সাড়ে ১২ ভাগ ভোট বাড়লেও আসন বেড়ে যায় ১৬৬টি। এ থেকে স্পষ্ট যে, প্রায় ৯-১০ ভাগ ভোটের এদিক-ওদিক হওয়া অসম্ভব না। আর এতে এক শ আসনের হেরফের হতে পারে।
এই বাস্তবতা থেকেই কংগ্রেসের আশা। অনেক পুরোনো দল। এর নেতারা ও কৌশল নির্ধারকেরা বিশ্বাস করেন যে, তারা কমপক্ষে ৫ শতাংশ ভোট বেশি পাবেন। কারণ এই নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি নেই। তারা এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে ছিল। তাছাড়া পুলওয়ামা-বালাকোটের মতো কোনো ভাবাবেগের সমস্যা নেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ধারনা ছিল, রামমন্দিরের উদ্বোধন ও এ নিয়ে প্রচার তাঁকে এবারের ভোটে উৎরে দেবে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি মন্দির নিয়ে যারা উচ্ছ্বসিত ছিল তারা মোদিকে আবার ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে পর্যন্ত গেছে কিনা সন্দেহ। এমনকি জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের মতো অন্যান্য বিষয়ও কল্কে পায়নি। বরং জীবিকার প্রয়োজনে মৌলিক উদ্বেগগুলো এই নির্বাচনে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
অনেক কংগ্রেস নেতা বিশ্বাস করেন, তাঁদের লাভ অনেক বেশি হবে। কারণ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বর্ণ শুমারি এবং সংবিধান বদলানোর হুমকি নির্বাচনী আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁরা আরও আশা করেন যে, জোটের কারণে অনেক রাজ্যে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভোট আসতে পারে।
কংগ্রেস মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ডে শক্তিশালী জোট করেছে। এমনকি গুজরাটে, মোদি-বিরোধী ভোটের বিভাজন ঠেকাতে আম আদমি পার্টির সাথে জোট বেঁধেছে কংগ্রেস। যদি অংশীদারদের থেকে ভোটের স্থানান্তর কার্যকরভাবে হয়, তাহলে মোট লাভ ১০ শতাংশের বেশি হতে পারে, যাতে কংগ্রেসের ভোট ৩০ শতাংশ হতে পারে। দলীয় নেতাদের মতে, এতে করে কংগ্রেস ৮০ থেকে ১০০ আসন পেতে পারে। আর হরিয়ানায় গুরগাঁও, ফরিদাবাদ ও কর্নালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে হবে তা স্পষ্ট। কংগ্রেস যদি হরিয়ানায় সাত-আটটি আসন জিততে পারে, তাহলে বিজেপি অবশ্যই সারা দেশে এক শ আসন হারাবে।
বিজেপি যে চার শ পার করার গর্ব মাঝপথে পরিত্যাগ করেছিল, সেই বিতর্ক আবার শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিজেপি ইতিমধ্যে ছয়টি ধাপে তিন শ পেরিয়েছে। অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এও বলছেন, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে অনেক বেশি পাবে। তার মানে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিজেপি তার ভোটের ভাগ বাড়াতে সচেষ্ট। মোদি গদি হারাবেন নাকি হারাবেন না-সেই আগামী মঙ্গলবার।