নিউইয়র্ক সিটির নিজ বাড়ির রান্নাঘরে বাংলাদেশি উইন রোজারিও নামের বাংলাদেশি তরুণকে দুই পুলিশ গুলি করে হত্যার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ১ মাসেরও বেশি সময় পর পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করেন নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশা জেমস। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের হাতে নিহত ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি যুবক উইন রোজারিওর মৃত্যুকালীন সময়ের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লাটিশা জেমসের উদ্যোগে এ ঘটনার পুলিশ বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশদের নিয়মিত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিকল্প দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব পুলিশ সদস্য কোন আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
বীভৎস ভিডিও ফুটেজ দেখে ক্ষুব্ধ নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি। এ নিয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য নতুন করে তাগিদ এসেছে। নিউইয়র্ক পুলিশের সহিংসতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে। গত ২৭ মার্চ নিউইয়র্কের ওজন পার্কে উইন রোজারিও নিজের ঘরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। কিছুটা মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়া রোজারিওর অস্বাভাবিক আচরণের জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়ে সিটির ৯১১ নাম্বারে কল দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রোজারিওর ঘরে প্রবেশ করে। তার হাতে একটি কাঁচি ছিল। পুলিশের বডি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো উদ্যোগই নেয়নি। প্রথমে টেজার দিয়ে উইন রোজারিওকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। উইন রোজারিওর মা তাঁর ছেলেকে গুলি না করার জন্য আর্ত চিৎকারে আকুতি জানাচ্ছিলেন। উইনের ছোট ভাইও এসময় গুলি না করার জন্য আকুতি জানাচ্ছিল।
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিস্থিতিতে পুলিশ মায়ের আগলে ধরা সন্তানকে গুলি ছুড়লে রোজারিও ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বডি ক্যামেরার ভিডিও প্রকাশের পর রোজারিওর পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাবা, মা এবং পারিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ভিডিও থেকে আবারও দেখা যাচ্ছে পুলিশ উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ঠাণ্ডা মাথায় রোজারিওকে হত্যা করেছে। সন্তানহারা পরিবারের সদস্যরা বিবৃতিতে রোজারিওকে হারানোর বেদনা বহন করে চলার কথা উল্লেখ করেছেন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দায়ী পুলিশদের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
জাস্টিস কমিটি নামের নাগরিক সংগঠনের পরিচালক লোয়েডা কলন বলেছেন, এ ঘটনা আবারও মনে করইয়ে দিচ্ছে সিটির ৯১১ কল পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশদের মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করার সঠিক প্রশিক্ষণ নেই। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রতিবছর ১৫৫ হাজার ৯১১ কল পেয়ে থাকেন। এসব কলের জের ধরে ১ শতাংশের নিচে পুলিশকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে হয়। রোজারিওর মৃত্যু ঘটনা নিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশ তাদের বিভাগীয় তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে। দায়ী পাওয়া গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।