news.ibtvusa@gmail.com

917-517-9777

বিরূপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিতে বিশ্ব চালের বাজার

বিরূপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিতে বিশ্ব চালের বাজার

আইবিটিভি ইউএসএ নিউজ ডেস্ক     

বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর চালের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ভারতসহ এশিয়ার শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশগুলো;যা খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

মহামারীর কারণে সরবরাহে বাধা এবং সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যান্য শস্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল আগেই। তাতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছে গেছে রেকর্ডের খুব কাছাকাছি।

তবে গত দুই বছরের বাম্পার ফলন এবং রপ্তানিকারকদের বিশাল মজুদের কারণে চালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। এবার উৎপাদন কমে গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল নিয়েও সঙ্কট দেখা দেবে।

বিশ্বে মোট উৎপাদিত চালের ৯০ শতাংশই আসে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। কিন্তু এসব দেশে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা।

ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংকের কৃষি অর্থনীতিবিদ ফিন জিবেল বলেন, প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমার সঙ্গে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত।

“উন্নয়নশীল বিশ্বে অনেক দেশেই খাবারের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে। চালের দাম বাড়লে সেটা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে।”

ভারতের যেসব এলাকায় ধান বেশি হয়, সেসব জায়গায় এবার বৃষ্টি হয়েছে কম। চীন পুড়ছে তাপদাহে। বাংলাদেশের বন্যা এবং ভিয়েতনামের ধান-চালের মানের অবনতির ফলে সার্বিকভাবে উৎপাদন কমবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদনকারী এই পাঁচ দেশে।

জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) অর্থনীতিবিদ শার্লি মুস্তাফা বলেন,“এ বছরের শুরুতে সামগ্রিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও চাল এখনও সহজলভ্য রয়েছে।

“আমরা এখন ভারত, চীন ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।”

‘উৎপাদন কমবে নিশ্চিত’

ভারতের আবহাওয়া অফিসের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটির ধান উৎপাদনকারী প্রধান রাজ্যগুলোর মধ্যে বিহার, ঝারখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে এ বছর এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এর ফলে এ বছর চালের উৎপাদন ১৩ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে ধারণা ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি বিভি কৃষ্ণ রাওয়ের।

তার ধারণা ঠিক হলে, ভারতে এবার প্রত্যাশার তুলনায় ১ কোটি টন কম বা গত বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম চাল উৎপাদন হবে। এ ছাড়া কলাই বা ডালজাতীয় শস্য এবং তেলবীজ চাষের কারণে ধানচাষের এলাকাও এবার কমেছে বলে জানান বিভি রাও।

ভারতে গরমের মৌসুমের আবাদ থেকে দেশটির মোট চাল উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ আসে। গত জুন পর্যন্ত এক আবাদ বছরে ভারতে রেকর্ড ১২৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন হয়েছিল।

মুম্বাইয়ের একজন ডিলার বলছেন, “উৎপাদন কমবে তা নিশ্চিত। তবে সব থেকে বড় প্রশ্ন হল- সরকার বিষয়টা কীভাবে সামলাবে।”

এ বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ভারতে ১৩ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টন ধান চালের মজুদ গড়ার লক্ষ্যের বিপরীতে ৫৫ মিলিয়ন টন মজুদ হয়েছে। ২০২১ সালে রেকর্ড ২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানির পরও ভালো মজুদের কারণে চালের দাম স্থিতিশীল ছিল।

গত বছর ভারত যে পরিমাণ চাল রপ্তানি করেছে তা পরের চারটি বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকার মোট রপ্তানির চেয়েও বেশি।

কিন্তু সরকার দেশের বাজারে চালের দামের ব্যাপারে খুবই সতর্ক মন্তব্য করে মুম্বাইয়ের সেই ব্যবসায়ী বলেন, “দাম সামান্য বেড়ে গেলেও সরকারকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পথে যেতে পারে।”

অন্যদিকে ভিয়েতনামে শস্য কাটার সময়ে বৃষ্টি এবার ফসলের মান নষ্ট করে দিয়েছে।

মেকং ডেল্টা অঞ্চলের ব্যাক লিউ প্রদেশের ৫০ বছর বয়সী কৃষক ট্রান কং ডাং বলেন, “ফসল কাটার সময় এত বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। এটা অস্বাভাবিক। মাত্র দশ দিনে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আগের পুরো মাসের বৃষ্টিপাতের সমান।”

ব্যাপক বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় তার দুই হেক্টর জমির ধানের ৭০ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এই কৃষক।

আমদানি ও দাম

খাদ্যপণ্য হিসাবে চালের সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশ চীন। দেশটি সবচেয়ে বেশি চাল আমদানিও করে। প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে এবার তাদের ধানের আবাদ ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অ্যামেরিকার কৃষি বিভাগের হিসাবে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনের চাল আমদানির পরিমাণ রেকর্ড ৬ মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে। এক বছর আগেও চীন ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন চাল আমদানি করেছিল।

অপরদিকে চালের তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ বাংলাদেশও বন্যার কারণে চাল আমদানির কথা ভাবছে।

ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশে ঘাটতির মোট পরিমাণ এখনও বিশ্লেষক বা সরকারি সংস্থাগুলো প্রকাশ করেনি। সাধারণত বছরের শেষ দিকে গিয়ে এসব হিসাব প্রকাশ করে দেশগুলো।

কিন্তু ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে রপ্তানির চালের দামে এই বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব এ সপ্তাহেই দেখা যেতে পারে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম চাল ব্যবসায়ীদের একজন রয়টার্সকে বলেছেন, “চালের দাম যে বাড়তে শুরু করেছে, তা আমরা এরইমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদা বাড়ছে এবং ফিলিপিন্স ও আফ্রিকার ক্রেতারা কার্গো বুকিং দিচ্ছে।”