news.ibtvusa@gmail.com

929-633-2900

গৃহবধূ থেকে যেভাবে রাজনীতিতে উত্থান খালেদা জিয়ার

গৃহবধূ থেকে যেভাবে রাজনীতিতে উত্থান খালেদা জিয়ার

আইবিটিভি ডিজিটাল      প্রকাশিত: দুপুর ০২:২২, ২৯ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার      আপডেট: বিকাল ০৩:০৪, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০মে যখন হত্যা করা হয় তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তখন ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছিলেন। জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন তখন খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যেত না। খালেদা জিয়া যখন রাজনীতিতে আসেন সেটা অনেককে চমকে দিয়েছিল।  জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল এবং তিনি মানসিকভাবে সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। এছাড়া খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে পরিবারের দিক থেকে তেমন কোনো উৎসাহ ছিল না।

বিএনপি'র ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন। 

দলের তরুণ অংশ চেয়েছিল খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হোক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে বিএনপি'র প্রধান হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ।  ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির চেয়ারম্যান থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় ভাষণ দেন।  সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৮০র দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে উঠে। জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার শাসন আমল, ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ -- এই দুইভাগে ভাগ করেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে খালেদা জিয়ার সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। সেই বিতর্ক থেকে তার দল ও সরকার আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয় তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সাল থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে আসেন, তবে এজন্য নানা বিধিনিষেধ পালন করতে হয় তাকে, যার মধ্যে রয়েছে - রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারা, বিদেশ যেতে না পারা।

২০২৪ সালের জুলাই গণ অভ্যুথানের পর লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। ২০২৬ সালের নির্বাচনে তিনটি আসন থেকে লড়ার ঘোষণাও এসেছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্ত বর্তমানে তার যা শারীরিক অবস্থা তাতে সুস্থ হয়ে উঠলেও বিএনপির হাল ধরতে পারবেন কি না তা বলা মুশকিল।