news.ibtvusa@gmail.com

917-517-9777

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় স্থান ময়মনসিংহের বিপিন পার্ক: নামফলক স্থাপনের দাবি

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় স্থান ময়মনসিংহের বিপিন পার্ক: নামফলক স্থাপনের দাবি

শফিয়েল আলম সুমন, ময়মনসিংহ     

ময়মনসিংহ নগরে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আলোচিত এবং স্মৃতিময় স্থান হচ্ছে বিপিন পার্ক। ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষে শহরের প্রাণকেন্দ্র জুবিলীঘাট এলাকায় অবস্থিত এই পাকর্টি।  বিপিন পার্কে ভাষা আন্দোলনের বহু সমাবেশের কাল সাক্ষী হলেও অনেকের কাছে আজ অজানা। ভাষার জন্য বিখ্যাত এই স্থানটিতে একটি নামফলক স্থাপনের দাবি অনেক দিনের।

ময়মনসিংহের রাজনৈতিক ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী বিপিন পার্ক। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এ পার্কটি আজও ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান ডাঃ বিপিন বিহারী সেনের স্মৃতি বহন করছে। তাঁর পুরো নাম বিপিন বিহারী সেন। তিনি ময়মনসিংহ শহরের একজন কৃতী পুরুষ। একাধিকবার পৌরসভার কমিশনার এবং চেয়ারম্যানও ছিলেন। বিপিন বিহারী ছিলেন একাধারে চিকিৎসক এবং স্বদেশি আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা। দরিদ্র লোকদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে তিনি অনেক মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। ইতিহাস পাঠে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে মাসেই ময়মনসিংহ শহরের বিপিন পার্কে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে এক ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া। এরপর ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের একাধিক সভা এখানে অনুষ্ঠিত হয়।

স্বাধীনতার আগে ঐতিহ্যবাহী এ পার্কটি ব্যবহার করা হতো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানীসহ গুত্বরুপূর্ণ নেতাদের সমাবেশে বিপিন পার্ক জনাকীর্ণ হতো। ময়মনসিংহ জেলার ভাষা আন্দোলনের সূচনাও হয়েছিল এখান থেকেই । স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল আন্দোলনেই এই পার্ক ছিল মিছিল আর জনসভায় মুখর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) যে কয়টি জেলা শহরে ভাষা আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ময়মনসিংহ তার অন্যতম। এখানে মুসলিম লীগের প্রবল দাপটের মধ্যেও ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া। ভাষা আন্দোলনে তিনি কারাবরণও করেন। এ ছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামছুল হক, অধ্যাপক সৈয়দ বদর উদ্দিন হোসাইন, মোস্তফা এম এম এ মতিন, কমরেড আলতাব আলী, আহমেদ সালেক প্রমুখ ময়মনসিংহের ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামিম জানান, ভাষা আন্দোলন ছাড়াও পরে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশ বিপিন পার্কে অনুষ্ঠিত হতো। পার্কটি ছোট থাকায় দেশের স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কমে আসতে থাকে। এখন সভা-সমাবেশ হয় টাউন হল মাঠ অথবা সার্কিট হাউস মাঠে।

বিশিষ্ট অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক স্বপন ধর বলেন, পার্কটি সৌর্ন্দয বর্ধিত হয়েছে কিন্তু ভাষার জন্য সভা-সমাবেশ হয়েছে অনেক কিন্তুু এর চিহ্ন নেই। অন্তত পক্ষে তিনি নাম ফলক বা সাইনবোর্ড স্থাপন করার দাবি জানান।

ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বিপিন পার্কটিকে তাঁরা দুর্দশার জায়গা থেকে তুলে এনেছেন। এর সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন। ভাষা সৈনিকদের জন্য কোন নাম ফলক বা সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়নি।

এবিষয়ে ময়মনসিংহ সিটির সহকারি সচিব আমিনুল ইসলাম জানান, এখন তারা শহীদ মিনার সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত। পরবর্তিতে বিপিন পার্কে নাম ফলক বা সাইনবোড স্থাপন করা হবে।